নাক্ষত্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞান/শূন্য বয়সের অনুভূমিক শাখা

testwiki থেকে
imported>MdsShakil কর্তৃক ১৯:৫৫, ২৯ অক্টোবর ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (+)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

মূল ইংরেজি নাম হচ্ছে "জিরো এইজ হরাইজন্টাল ব্রাঞ্চ" (Zero Age Horizontal Branch) বা সংক্ষেপে ZAHB, বাংলায় একে এখন থেকে "যাহব" (উচ্চারণ হবে আসলে যা'ব্) বলেই ডাকব। হের্ডসব্রং-রাসেল চিত্রে লোহিত দানব শাখার একেবারে চূড়া থেকে তারাগুলো যে অনুভূমিক রেখার বিভিন্ন অংশে এসে পড়ে সেই রেখার নাম যাহব।

আরজিবি-র চূড়া থেকে অনুভূমিক শাখায়

স্বল্প ভরের তারার হিলিয়াম কোরে যে অজপাত্য থাকে হিলিয়াম ফ্ল্যাশের মাধ্যমে তা পুরো দূর করতে ১ মিলিয়ন বছর লাগে। এ সময় তারার পৃষ্ঠ প্রভা অনেকখানি কমে যায়। কারণ হচ্ছে, প্রধান হিলিয়াম ঝলকের পর যখন কোরের বাইরের দিককার অপজাত্য (degeneracy) দূর হয়ে যায় তখন কোর প্রসারিত হতে শুরু করে। অনেক প্রসারিত হওয়ায় তাপমাত্রা কমে যায় এবং সে কারণে এর চারদিকে বিরাজমান হাইড্রোজেন দহন শেলের তাপমাত্রাও কমে যায়। এর ফলে প্রভা কমে যায়। এভাবেই আরজিবি-র চূড়া থেকে তারা নেমে আসে অনুভূমিক শাখায়। মনে রাখতে হবে, যাহবে আসার পূর্বেই হিলিয়াম কোরের অজপাত্য প্রায় পুরো দূর হয়ে যায়।

আরজিবি-র চূড়া থেকে যাহবে আসতে যেহেতু অনেক কম সময় লাগে সেহেতু এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এমন তারা সহজে দেখা যায় না। তারার বিবর্তনের মডেল তৈরি করতে গিয়ে অনেক বিজ্ঞানীই তাই আরজিবি থেকে যাহবে আসার সময়টুকু উপেক্ষা করেন, যেহেতু এর সাথে পর্যবেক্ষণ মেলানোর কোন উপায় নেই।

হিলিয়াম দহনের মাধ্যমে কার্বন উৎপন্ন হয়। হিলিয়াম দহনের পুরো প্রক্রিয়ায় মোট যত কার্বন তৈরি হয় তার মাত্র ৫% তৈরি হয় হিলিয়াম ফ্ল্যাশের প্রভাবে, আরজিবি চূড়া থেকে যাহবে আসার সময়টুকুতে। যাহবে আসার পর কোরটি প্রায় সমসত্ত্ব হয়ে যায় এবং সেখানে প্রতিনিয়ত হিলিয়াম দহন হতে থাকে।

যাহবে কোন তারা কিভাবে বিবর্তিত তা ৪ টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে:

  1. হিলিয়াম কোরের ভর, McHe
  2. তারার মোট ভর, Mtotal
  3. তারার এনভেলপে হিলিয়ামের প্রাচুর্য, Y
  4. এনভেলপে ধাতবতা, zenv

তবে নিম্ন ভরের তারায় হিলিয়াম কোরের ভর মোট ভরের উপর নির্ভর করে না, সকল ভরের তারায়ই এক (0.5M) থাকে। কারণ এই ভরে সব তারার কেন্দ্রে অপজাত্যের পরিমাণ প্রায় সমান হয়। আরজিবি-র চূড়ায় পৌঁছাতে নিম্ন ভরের তারার অবশ্যই ৪-৫ বিলিয়ন বছরের বেশি লাগে। সুতরাং আরজিবি চূড়ায় যাদের বয়স ৪-৫ বিলিয়ন বছরের বেশি তাদের ক্ষেত্রে হিলিয়াম কোরের ভরের উপর কিছু নির্ভর করে না, কারণ তা সব সময়ই এক। "প্রথম ড্রেজ-আপ" (first dredge-up) এর কারণে যাহব তারার এনভেলপে হিলিয়ামের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় কিছুটা বাড়ে (ΔY=0.020.04)।

নিউক্লীয় বিক্রিয়া এবং ধ্রুব প্রভা

যাহব তারায় দুটি নিউক্লীয় বিক্রিয়া চলে, কোরে হিলিয়াম দহন এবং তার চারদিকে অবস্থিত একটি শেলে হাইড্রোজেন দহন। হিলিয়াম দহনের কারণে কোরটি পরিচলনীয় (কনভেকটিভ) হয়ে যায়। শেলের হাইড্রোজেন দহন নির্ভর করে এনভেলপের ভরের উপর। এনভেলপের ভর বেশি হলে, শেল বেশি উত্তপ্ত হয়, তাতে হাইড্রোজেন দহনের হারও বেড়ে যায়।

আগেই বলেছি নিম্ন ভরের তারাদের কোরের ভর একই থাকে। কিন্তু এনভেলপের ভর ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণে মোট ভর ভিন্ন হতে পারে। ধরা যাক এইচ-আর ডায়াগ্রামে আরজিবি-র চূড়ায় কিছু তারা আছে যাদের এনভেলপের ভর ভিন্ন ভিন্ন। কোন তারাটি অনুভূমিক শাখার কোন বিন্দুতে এসে পৌঁছাবে তা নির্ভর করে এনভেলপের ভরের উপর। এনভেলপের ভর যদি বেশি হয় তাহলে অনুভূমিক শাখার শীতল প্রান্তে পৌঁছাবে, আর এনভেলপের ভর কম হলে পৌঁছাবে উত্তপ্ত প্রান্তে। ধরা যাক লোহিত দানব শাখায় চড়ার আগে সব নিম্ন ভরের তারার ভরই ছিল 0.8M. কিন্তু লোহিত দানব শাখায় থাকার সময় তারা এনভেলপ থেকে ভর হারাবে। চূড়ায় পৌঁছানোর পর যার ভর যত বেশি হবে তার তাপমাত্রা তত কম হবে, অর্থাৎ অনুভূমিক শাখায় সে তত শীতলতর প্রান্তে অবস্থান করবে। তবে সব তারার একটি প্রায় অনুভুমিক রেখাতেই অবস্থান করার কথা, যেজন্য একে বলা হয় অনুভূমিক শাখা। অর্থাৎ সকল ভরের তারার প্রভাই সমান।

কিন্তু এনভেলপের ভরের কারণে সব ভরের তারার প্রভা সমান হয় না। এনভেলপের ভর বাড়লে যেহেতু শেলের হাইড্রোজেন দহন বেড়ে যায় সেহেতু তারাটির প্রভাও বেড়ে যায়। এজন্য অপেক্ষাকৃত শীতল এবং ভারী তারার দিকে অনুভূমিক রেখা একটি উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। অনুভূমিক শাখার উত্তপ্ত প্রান্তে তারাগুলোর এনভেলপের ভর প্রায় 104M এবং তাপমাত্রা প্রায় ৩৫,০০০ কেলভিন। অন্যদিকে শীতল প্রান্তে এনভেলপের ভর প্রায় 0.4M এবং তাপমাত্রা প্রায় ৪০০০ কেলভিন।

স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডল হিসেবে যাহব তারা

আসলে তারার প্রভা হিলিয়াম কোরের ভর এবং এনভেলপের ভর দুটোর উপরই নির্ভর করে। কিন্তু নিম্ন ভরের (M<1.4M) তারায় কোরের ভর ধ্রুব থাকায় এটি নির্ভর করে কেবল এনভেলপের ভরের উপর। তবে সার্বিকভাবে প্রভা খুব বেশি পরিবর্তিত হয় না। এজন্যই অনুভূমিক শাখার নিম্ন ভরের তারাদেরকে দূরত্ব পরিমাপের "স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডল" হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

প্রমিত দীপ হিসেবে ব্যবহার করতে হলে যাহব তারার প্রভা সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। সামান্য কিছু একটা পরিবর্তন করলে তাদের প্রভা কিভাবে পরিবর্তিত হয় তা বুঝতে হবে। প্রভার উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে হিলিয়াম কোরের ভর, প্রাথমিত হিলিয়াম প্রাচুর্য এবং ধাতবতা। নিম্নোক্ত সমীকরণগুলোর মাধ্যমে পরিবর্তনের ধরন বোঝা যায়:

  1. [dlogLZAHB3.85dY]McHe,Z2.07
  2. [dlogLZAHB3.85dlogZ]Y,McHe0.04
  3. [dlogLZAHB3.85dMcHe]Y,Z3.04

এই তিনটি বিক্রিয়ার মাধ্যমে গাণিতিক সম্পর্ক বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু এখন ভৌত ব্যাখ্যা দিচ্ছি, পর্যায়ক্রমে:

হিলিয়াম প্রাচুর্যের প্রভাব

ধরি, প্রাথমিক ধাতবতা সব তারার জন্য একই। প্রথমেই যদি কোরে হিলিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে দহন দ্রুত হবে এবং হিলিয়াম কোরের ভর কমে যাবে। এতে তারার উজ্জ্বলতা কমে যাওয়ার কথা।

কিন্তু এনভেলপের ভর যদি বেশি হয়, অর্থাৎ তারার মোট ভর যদি বেশি তাহলে শেলে হাইড্রোজেন দহন দ্রুত হবে এবং আরও বেশি হিলিয়াম তৈরি হয় এনভেলপে জমা হবে। এতে এনভেলপের অপাসিটি কমে যাবে এবং প্রভা বেড়ে যাবে।

অনুভূমিক শাখার উত্তপ্ত তথা নীল প্রান্তে তারার মোট ভর কম। তাই তাদের হিলিয়াম কোরের ভর কমে যাওয়ায় প্রভা কমে যাবে, এনভেলপের ভর বেশি না হওয়ায় হাইড্রোজেন দহন সেই কমে যাওয়াকে ঠেকাতে পারবে না।

কিন্তু শাখাটির লাল প্রান্তে তারাগুলোর ভর বেশি, হিলিয়াম কোরের ভর কমে গেলেও হাইড্রোজেন দহনের কারণে আল্টিমেটলি প্রভা বাড়বেই।

সার্বিকভাবে বলা যায়, অনুভূমিক শাখা আরও বেঁকে যাবে: হের্ডসব্রং রাসেল চিত্রে নীল প্রান্ত নিচে নেমে যাবে এবং লাল প্রান্ত উপরে উঠে যাবে।

ধাতবতার প্রভাব

হিলিয়াম প্রাচুর্য স্থির রেখে ধাতবতা বাড়ালে সব তারারই প্রভা হ্রাস পায়। কারণ দুটি:

  1. ধাতবতা বৃদ্ধি করলে হিলিয়াম কোরের প্রাথমিক ভর (হিলিয়াম ঝলকের সময়) হ্রাস পায়। ধাতবতা বাড়ার অর্থই হচ্ছে পূর্বে হিলিয়াম থেকে অপেক্ষাকৃত ভারী মৌল যেমন, কার্বন তৈরি হয়েছে, অর্থাৎ হিলিয়াম আগেই কমে গেছে। এতে হিলিয়াম ঝলকের তেজ কম হয় এবং প্রভা হ্রাস পায়।
  2. ধাতবতা বৃদ্ধিতে তারার এনভেলপের অনচ্ছতা (অপাসিটি) বেড়ে যায়। অনচ্ছতা বেড়ে গেলে পরিচলন বাড়ে, তাপমাত্রা পুনর্বণ্টিত হয় এবং ফোটন সহজে পালাতে পারে না। আর ফোটন পালাতে না পারলে প্রভা হ্রাস পায়।

সুতরাং মোট ভর ঠিক রেখে এনভেলপের ধাতবতা বাড়ালে যাহব শীতল এবং অপেক্ষাকৃত নিষ্প্রভ হয়ে যায়।

নন-ক্যাননিক্যাল প্রক্রিয়ার প্রভাব

ঘূর্ণন এবং নন-ক্যাননিক্যাল মিশ্রণ গুরুত্বপূর্ণ নন-ক্যাননিক্যাল প্রক্রিয়া।

যাহব তারার উজ্জ্বলতা বা প্রভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হচ্ছে হিলিয়াম কোরের ভর এবং তারার মোট ভর। কোন প্রক্রিয়া যদি হিলিয়াম ফ্ল্যাশের সময়কে পিছিয়ে দিতে পারে তাহলে হিলিয়াম কোরের ভর বাড়বে এবং মোট ভর কমবে। কারণ সেক্ষেত্রে তারাটি লোহিত দানব শাখায় আরও বেশি সময় থেকে বেশি হিলিয়াম তৈরি করবে এবং এনভেলপ থেকে আরও বেশি ভর হারাবে। উল্লেখ্য, তারার ঘূর্ণন বেগ যদি বাড়ে তাহলে হিলিয়াম ফ্ল্যাশ আরও দেরিতে ঘটে।

টেমপ্লেট:বইয়ের বিষয়শ্রেণী